যিলহজ্জ চাঁদের ১০ তারিখে বিশ্ব মুসলিমদের জন্য উপস্থিত হয় খুশীর দিন। তাহা ঈদুল আজাহা নামে অভিহিত। ’আজহা’ শব্দের অর্থ কুরবানী। সারা জাহানের ধনী মুসলমানেরা এই দিনে উট – গরু, ভেড়া-বকরী- দুম্বা ইত্যাদি পশু আল্লাহর নামে কুরবানী এবং এই উপলক্ষে আনন্দ উদযাপন করিয়া থাকে। তাই ইহার নাম ঈদুল আজহা বা কুরবানীর উৎসব। আল্লাহর
রাস্তায় পশু কুরবানীর তাৎপর্য ও ফজিলত অপরিসীম। তাই এই দিনের ফজিলতও অপরিসীম।
কতিপয় জরুরী মাসয়ালা:- ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল্ আজহার দিনে অতিরিক্ত ছয় তকবীরের সহিত দুই রাকয়াত নামাজ পড়া ওয়াজিব। এই নামাজ এবং ছয় তাকবীর – উভয়টাই ওয়াজিব।
জুমা’র নামাজের জন্য যে-সকল শর্ত রহিয়াছে, ঈদের নামাজ ওয়াজিব এবং শুদ্ধ হওয়ার জন্যও সেই সব শর্ত রহিয়াছে। যেমন- বালেগ হওয়া, পাগল-মাতাল অজ্ঞান না হওয়া, মুকীন হওয়া অর্থাৎ মুসাফির না হওয়া, জানায়াত হওয়া- ইত্যাদি।
জুমা’র দুই রাকয়াত নামাজ ফরজ আর ঈদের দুই রাকয়াত নামাজ ওয়াজিব।
জুমা’র নামাজে খুতবা পাঠ করা সুন্নত। জুমার খুতবা নামাজের পূর্বে এবং ঈদের খুতবা নামাজের পরে পড়িতে হয়।– (মোঃ ফালাহ)
তাকবীর অর্থাৎ’আল্লাহু আকবার’ বলিয়া ঈদের খুতবা আরম্ভ করা এবং প্রথম খুতবায় নয়বার এবং দ্বিতীয় খুতবায় সাতবার তাকবীর বলা মুস্তাহাব। (আলমগিরী) দুই খুতবার মাঝখানে তিনবার ‘ছুব্হানাল্লাহ্’ বলার সম-পরিমান সময় বিরতি দেওয়া মুস্তাহাব। ঈদুল্ ফিতরের খুতবায় ছদ্কায়ে-ফিতর এবং ঈদুল্ আজহার খুতবায় কুরবানীর মাসায়ালা বর্ণনা করা সুন্নত। ঈদের খুতবা পড়া সুন্নত হইলেও তাহা শ্রবন করা মুকতাদীগণের উপর ওয়াজিব।– (বাঃ রায়েক)
বিশেষ কোন ওজর বশতঃ শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল্ ফিতরের নামাজ পড়িতে না পারিলে কেবল উহার পরের দিন অর্থাৎ ২রা শাওওয়াল তারিখে পড়িতে পারিবে। তাহারপর আর পারিবে না, কিন্তু ঈদুল্ আজহার নামাজ যিল্হজ্জ চাঁদের ১২ তারিখে পর্যন্ত ; বিনা ওজরেই পড়া যায়; তবে এইরূপ করা মাকরূহ।
সকলে ঈদের নামাজ পড়িয়া ফেলিল; কিন্তু কোন এক ব্যক্তি কোনও কারণে তাহাতে শরীক হইতে পারে নাই। এই অবস্থায় তাহার একাকী ঈদের নামাজ পড়া শুদ্ধ নয়। কোন ব্যক্তি ঈদের জামায়াতে শরীক হিইয়াছে, কিন্তু কোনও কারণে হাহার নামাজ নষ্ট হইয়া গিয়াছে। এই অবস্থায় তাহার ঐ নামাজ কাজা করিতে হইবে না।–(দোঃ মোঃ)
তবে, কিছু সংক্যক লোক ঈদের জামায়াতে শরীক হইতে না পারিয়া থাকিলে, তাহারা নিজেরা দ্বিতীয় জামায়াত করিয় নামাজ পড়িবে। এইরূপ করা তাহাদের উপর ওয়াজিব।–(দোঃ মোঃ)
ঈদের দিনে ঈদের নামাজ পড়িবার পূর্বে নিজের ঘরে কিঘ্বা ঈদ্ গাহে কোন নফল নামাজ পড়া মাকরূহ।–(গুন্ইয়া)
ঈদের নামাজের সময়ে জানাযা উপস্থিত হইলে প্রথমে ঈদের নামাজ আদায় করিবে, তারপর ( ঈদের খুতবা পাঠ মূলতবী রাখিয়া ) জানাযার নামাজ পড়িবে এবয় তাহারপর ঈদের খুতবা পড়িবে।–( আলমগিরী )
ঈদের দিনে পালনীয় সুন্নত্ কাজসমূহ-ঈদের দিনে নিম্নলিখিত কাজসমূহ করা সুন্নত :
১। অতি প্রত্যুষে শয্যাত্যাগ করা।
২। মেসওয়াক করা এবং গোসল করা।
৩। নিজের সাধ্য অনুযায়ী উৎকৃষ্ট পোষাক পরিধান করা।
৪। আতর ইত্যাদি কোন খোশবু ব্যবাহার করা।
৫। সাধ্য পরিমাণ খাওয়া -দাওয়ায় ধুমধাম করা।
৬। ঈদের নামাজের যাইতে অযথা বিলম্ব না করা।
৭। ঈদুল্ ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কিছু মিষ্টান্ন খাওয়া, আর ঈদুল্ আজ্হার নামাজের পূর্বে কিছু না খাইয়া নামাজের পর যাথশীঘ্র সম্ভব পশু কুরবানী করতঃ কুরবানীর গোশ্ত দ্বারা আহার করা।
৮। ঈদগাহে গমনের পূর্বেই ‘ছদ্কায়ে-ফিতর’ আদায় করা।
৯। ঈদগাহে এক পথে যাওয়া আর ফিরিবার সময় অন্য পথে আসা।
১০। অসুবিধা না থাকিলে পায়ে হাটিয়া ঈদগাহে যাওয়া।
১১। ঈদুল্ ফিতরের দিন ঈদগাদে যাওয়ার পথে নীরবে তাকবীর বলা আর ঈদুল আজ্হার দিন ঊচ্চৈস্বরে তাকবীর বলা।–( দোঃ মোঃ; বা রায়েক)
ঈদের নামাজের নিয়ত – নিম্নলিখিত কী ভাবে ঈদের নামাজের নিয়ত করিবে। আরবী নিয়ত এবং বাংলা নিয়ত উভয়টাই লিপিবদ্ধ করা হইল। যে-কোন ভাষায় নিয়ত করা দুরুত্ব আছে। মনের নিয়তই হইল আসল নিয়ত ।
আরবী নিয়ত :
’নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতাই ছালাতি ঈদিল্ আজহা’ বলিবে। কেহ কেহ কুরবানীর ঈদের নামাজের নিয়ত করিবার সময় ‘ছালাতি ঈদিজ্জোহা’ বলিয়া থাকে। ইহা অশুদ্ধ কেননা, ‘জেপহা’ শব্দের অর্থ পূর্বাহ্ন বলা প্রহরখানেক। সুতরাং ‘ঈদুজ্জোহা’ শব্দের অর্থ দাঁড়ায় “বেলা এক প্রহর সময়ের খুশী”। আর ‘আজহা’ শব্দের খর্থ কুরবানী, এবং ‘ঈদুল আজহা’ অর্থ কুরবানীর আনন্দ। কাজেই, ‘ঈদুজ্জোহা’ বলিবে না; বরং ‘ঈদুল্ আজহা’ বলিবে।
মুক্তাদীগণ নিয়ত করিবার সময়ে “মুতাওয়াহজ্জিহান্ ইলাজিহাতিল্ কা’ বাতিশ শারীপাতি” বলার পূর্বে “ইকতাদাইত বিহাযাল ইমাম’ বলিবে অথবা মনে মনে ইমানের একতেদা করিয়া ঈদুল্ ফিতর ( অথবা ঈদুল আজহা ) – এর দুই রাকয়াত ওয়াজিব নামাজ ছয় তকবীরের সহিত আদায় করিবার মনস্থ করিলাম” বলিবে।