শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ১২:৩৭ অপরাহ্ন

শঙ্খবালা || সঞ্জয় সরকার

শঙ্খবালা || সঞ্জয় সরকার / ১২১ বার
আপডেট : শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১
শঙ্খবালা_||_সঞ্জয়_সরকার

শঙ্খবালা || সঞ্জয় সরকার: সন্ধ্যা নামার আগ মুহূর্ত। সূর্য প্রায় অস্ত যাবে যাবে ভাব,সমুদ্র তীরে বসে আছি বেশ চিন্তিত মন।দক্ষিণা বাতাস বইছে, মৃদু হাওয়া ছুইয়ে দিচ্ছে শরীর।ফাগুন মাসের দিনগুলি এমনই হয় অনেক রুক্ষ গাছের পাতা ঝরে যায়।

আজ এই ফাগুনের দিনের সাথে বড্ড মিল খুজে পাই রুক্ষ হাওয়ার সাথে রুক্ষ মন যেন একই সূত্রে গাঁথা। নিরব সমুদ্রকে সামনে রেখে যতদূর চোখ যায় স্পষ্ট দেখি স্বচ্ছ জলরাশি ওপারে নীল দিগন্তে আকাশ ছুঁয়েছে।একটু পরেই যেন রক্ত লাল সূর্যটা মেতে উঠবে অস্ত যাবার খেলায়।দেখতে দেখতে সূর্যের বিদায় সমুদ্র গ্রাস করল সূর্যটাকে। আঁধার নামে চারিদিক পুরো পরিবেশের সাথে মিলাই নিজেকে দিন কাঁদছে সূর্য হারানোর ব্যাথায় আর আমি প্রিয়া হারানোর।

আজ থেকে প্রায় একমাস আগের কথা।সমুদ্রতীরে এসেছিলাম বন্ধুদের সাথে বেড়াতে কলেজ ছুটি যার কারণে ভ্রমণে এসেছিলাম। অনেক আনন্দে যাচ্ছিল কয়েকটা দিন বুঝতে পারেনি আমার জন্য সুখের শেষে অপেক্ষা করছে ঘোর আঁধার।একদিন বিকেলবেলা রিসোর্ট থেকে বেরিয়েছি সমুদ্র দেখার জন্য। অতঃপর সমুদ্র তীরে বসে আছি দেখেছি সমুদ্রের রূপলাবণ্য।বেশ ফুরফুরে মন কিছুক্ষণ পরেই সামনে দিয়ে একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছিল,তাহার পরনে জিন্স প্যান্ট পরা সমুদ্রের লোনা জলে ভেজা বালিতে যেন বালিকার পায়ের ছাপ ফেলে যাচ্ছে। মুখের দিকে তাকাতেই পাশ কেটে যায় পিছন থেকে দেখি চুলগুলো সাদা খরের গাধার মত,ধবধবে সাদা চামড়া দেখে বুঝতে পারি এ এক বিদেশিনি। তার সামনে কিছু দূরে আরো কয়েকটা বিদেশি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে হয়তো তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই যাচ্ছে।

আমার সামনে মাটির বুকে তার রেখে যাওয়া পায়ের ছাপ দেখছি এবং তার গায়ের গন্ধ ছড়িয়ে দিয়েছে আমার চারিপাশে থাকতে পারিনি আর বসে। উঠে তাদের পিছনে যেতে যেতে দেখি প্রবেশ করছে আমাদের পাশের রিসোর্টে। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর রিসোর্ট ম্যানেজারের কাজ থাকে তার ঠিকানা জানতে পারি। রিসোর্ট ম্যানেজারের ভাষ্যমতে বিদেশিনী অস্ট্রেলিয়ান নারী।অতঃপর দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসি নিজ রিসোর্টে।উদাস উদাস মন কোন ভাবে শান্ত হচ্ছে না রাত পোহানোর অপেক্ষায় মগ্ন। কিন্তু আজকের রাতটা অতি দীর্ঘ হচ্ছে কেন হয়তো অপেক্ষার রাত অতি দীর্ঘ হয়। সারা রাত দু চোখের পাতা এক হবার সুযোগ নেই চোখ খুললে যতোটুকু দেখি চোখ বুজলেই আরও বেশি দেখি।যেন অচেনা অন্সরী ধরার বাহির অধরাতে রূপ বদলায়। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার রাত শেষে ভোরের আলোয় হেসেছে সূর্য বিছানা থেকে উঠে মনে হলো বিদেশিনীর কথা।

ছুটে যাই বিদেশিনীর রিসোর্টের সামনে এদিক-ওদিক ঘুরা ফেরার পরও কোন দেখা নেই।অতঃপর ক্লান্ত হৃদয়ে অপ্রাপ্তির চাহিদা নিয়ে ফিরি নিজ রিসোর্টে। ভাবছি কিভাবে পাবো তাকে?বিকেলবেলা সমুদ্র তীরে বসে আছি তৃষ্ণার্ত মন যেন তাহার তৃষ্ণায় ব্যাকুল।একটু দূরে কয়েকজন রমণী দাঁড়িয়ে তাদের মাঝে একেক জন একেক কাজে ব্যস্ত। কেউ ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে আবার কেউ সমুদ্রের খোলা বাতাসে গা ভাসাচ্ছে। কিন্তু তাদের মাঝে একজন নত হয়ে শামুক তুলতে ব্যাস্ত, শামুক সাদা বড় ধরনের শঙ্খ যাহাকে বলে। যাইহোক মাথা তুলতেই দেখি সেই পরিচিত মুখ কালকের বিদেশিনী।সকল সঙ্কোচ কাটিয়ে কাছে গিয়ে সামনে দাঁড়াতেই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে আছি দুজন দুজনের দিকে শুভদৃষ্টি বোধহয় একেই বলে। চোখের ভাষা হয়ত আমি বুঝি না তবে এটা স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে আমাকে ঘিরে তার মনে হাজার প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে এই মুহূর্তে,তার চোখ এরকমই বলছে।

অনেকক্ষণ নিরবতার পর কথা বলার চেষ্টা,–বিকেলের বৈরি হাওয়ায় গা ভাসিয়ে সমুদ্রের লোনা জলে ভেজা বালিতে শঙ্খ তুলতে ব্যস্ত! কি নামে ডাকবো তোমায়? তাহার মুখ থেকে কোনো জবাব পাইনি। আবার বলছি —কি গো শঙ্খবালা, মনপ্রান কি সবই শঙ্খের মধ্যে নাকি বাহিরে কিছু অবশিষ্ট আছে?শঙ্খবালার জবাব —থাকলে কি হবে? —যদি থাকে তাহলে সেই মনের আকুল প্রার্থী শঙ্খের মতো আমাকেও ঠাঁই দিও মনের কোণে। –আর যদি বলি মনের সবটুকু জায়গা শঙ্খকে ঘিরে,তাহলে? —এজন্মে একটু জায়গা রেখো পরের জন্মে না হয় শঙ্খ হব।

তিনি চলে যাওয়ার জন্য সামনে পা বাড়ালো —বলছিতো শঙ্খ হব —ভেবে দেখব —আবার দেখা হবে কখন? —নিয়তি যখন চায়,এই বলে চলে যায়। রিসোর্টে ফিরে রাতে খেয়ে শুয়ে পড়ি,পরদিন রিসোর্টের সামনে আসি কিন্তু তারপর থেকে আর তাকে দেখতে পাইনি। দু’দিন পর রিসোর্ট ম্যানেজারের কাছ থেকে জানতে পারি বিদেশিনী পাড়ি জমিয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। মুহূর্তে নীল আকাশ মেঘলা একটুতেই ঝরবে বৃষ্টি, এমনতো ভাবিনি তাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে গিয়েছি আকাশ ভেঙ্গে পড়ল মাথায়। কোথায় হারালাম তাকে আর কোথায়ই বা পাবো আর কেনই বা এত ভাবনা তাকে ঘিরে। অতঃপর ক্লান্ত মন নিয়ে ফিরি ঢাকায় সমুদ্র কে বিদায় দিয়ে। কিন্তু কিছুই ভালো লাগছিলো না শুধু বিদেশিনীর কথাই মন জুড়ে।

বেশিদিন থাকতে পারিনি প্রায় এক মাস পর আবার আসি সমুদ্রতীরে। সেই সমুদ্রে যেখানে হারিয়েছি বিদেশীনিকে আর আজ বসে আছি এই সমুদ্রতীরেই। কোথায় পাবো সেই শঙ্খবালার দেখা মনে হাজার প্রশ্নের উদয় এবং প্রবল বাসনা মন একে যায় শুধু তাকে দেখবো এক নজর।এগুলো ভাবছি আর সমুদ্রকে দেখছি মনে পড়ল লোকমুখে প্রচলিত একটি কথা। সমুদ্র নাকি সবকিছু ফিরিয়ে দেয়, আমাকেও কি দেবে আমিও তো সমুদ্রে পেয়েছি শঙ্খবালাকে আবার এখানেই হারিয়েছি। এগুলো ভাবছি আর ব্যাগ থেকে কাগজ-কলম বের করছি কি লেখা যায়?

প্রিয় শঙ্খবালা:
দেখেছি তোমায় কোন বিবর্ণ বিকেলে
সমুদ্রপৃষ্ঠে পদচিহ্ন ফেলে যেতে।
তোমার ছড়ানো সুভাষের টানে
কাছে যেতেই শঙ্খের প্রেমে মাতোয়া।
হৃদয়জুড়ে শুধু শঙ্খের বসত
শঙ্খবালায় ডেকেছি তোমায়।
করুন সুরে প্রেম নিবেদনে
মনের কোণে ঠাঁই হলো না।
জন্মান্তর যদি সত্যি হয় পরের জন্মে শঙ্খ হব।
ভেবে দেখবে বলেছিলে,আজও হলো না সেই
ভাবা।যুগের যুগ কাটবে অপেক্ষায় সৈকতে
শঙ্খবালা চলে এসো মনের টানে।

বি:দ্র: যদি কোন ভুল মানুষের কাছে পড়ে এই চিঠি তাহলে অনুরোধ তাহার কাছে সে যেন পুনরায় অবমুক্ত করে। লেখাগুলো একটা সাদা কাগজে লিখে কাগজ খানা ভাজ করে পাশেই একটা কোকের বোতল ছিল চিঠি খানা বোতলের ভিতর দিয়ে ভালো করে মুখ লাগিয়ে দেই।এবং এই প্রাপক বিহীন চিঠি সমুদ্রের মাঝে ছুড়ে মারি শুধু মনের আবেগে। যদি প্রিয়তমার হাতে কোনদিনও পড়ে তাহলে ধন্য হবে আজ আমার এই চিঠি। তারপর সন্ধ্যায় ফিরি রিসোর্টে কিন্তু কিছুই ভালো লাগছিলো না হৃদয় জুড়ে যেন শুধু এক বিদেশীনির হাহাকার। তারপর সেই অপ্রাপ্তির ছায়া জড়ানো মন নিয়ে ফিরে আসি ঢাকায়। এভাবে অনেকদিন হয়ে গেল কারো সাথে কোনো কথা বলি না কোনো বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগ নেই। তারপর, প্রায় তিন মাস পর ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছি অনেকদিন ফেসবুকে ঢুকা হয় না। আজ হঠাৎ ফেসবুকে ঢুকে দেখি একটা ঘটনা কয়দিন হলো ভাইরাল হয়ে বেড়াচ্ছে। তখন একটা লেখা এবং একখানা বোতলের ছবি তার ভেতরে একটা চিরকুট দেখা যাচ্ছে,লেখাটা পড়ে দেখি আমার সেই লেখা,যা আমি সমুদ্রে ফেলে ছিলাম। রীতিমতো আঁৎকে ওঠার মতো তারপর আর আমি কিছু করিনি। তার কয়েকদিন পর এক সকালে আমার নাম্বারে একটা ফোন আসে। আমি যে রিসোর্টে উঠেছিলাম সেই রিসোর্ট এর ম্যানেজারের কাছে থেকে হয়তো রুম নেওয়ার সময় নাম্বারটা দিয়েছিলাম। সেখান থেকে জানতে পারি কোন এক মেয়ে নাকি আমার জন্য অপেক্ষা করছে। অতঃপর ছুটে চলে আসি সেখানে সমুদ্রতীরে। সৈকতে পা রাখতেই দেখি সেই বিদেশীনি। মনে মনে ভাবছি সমুদ্র তাহলে ফিরিয়ে দিল আমাকে।


এ জাতীয় আরো সংবাদ