শীতের ছুটি || শারমিন নাহার ঝর্ণা
হালকা কুয়াশা ঘেরা সকাল টিনের চাল বেয়ে পরছে শিশিরের ফোটা, প্রভাতের অরুণ কিছুটা মাথা উঁচু করে মিটি মিটি হাসছে। চেয়ার নিয়ে ঘরের পেছনে দাদু বসে আছে। রাতুল চুপিচুপি গিয়ে পেছন থেকে দাদুর গলা জড়িয়ে ধরে বলে শুভ সকাল দাদু।
আরে দাদু ভাই তুমি এত সকালে উঠলে কেন? উঠবো না কেন দাদু? তুমি বইতে পড়নি আমি হব সকাল বেলার পাখি সবার আগে কুসুম বাগে উঠব আমি ডাকি। দাদু আমি এখানে যে কয়দিন আছি শীতের ছুটিতে তোমাকে নিয়ে আমাদের গ্রামের প্রকৃতি ঘুরে দেখব। ঠিক আছে দাদু ভাই, চলো সকালের নাস্তাটা করে তারপর বের হবো। তোমার দাদিমা তোমার জন্য গরম গরম ভাপা পিঠা তৈরি করেছে খেজুরের পাটালি দিয়ে। তাই নাকি দাদু চলো আমার খুব প্রিয় ভাপা পিঠা।
রাতুল বলল, দাদু এভাবে যদি তোমার সঙ্গে সব সময় থাকতে পারতাম কতনা আনন্দ হতো। ছুটি শেষ হলেই তো আবার চলে যেতে হবে কারাগারে। কারাগার মানে কি দাদুভাই? তুমি বুঝতে পারলে না দাদু কারাগার মানে শহরের বন্ধ ঘর। সেই বন্ধ ঘরে থাকলে নাকি মানুষের মত মানুষ হওয়া যায়। ওটাই নাকি ভালো পরিবেশ। প্রিয় মানুষদের ছেড়ে কি করে মানুষের মত মানুষ হওয়া যায় দাদু, বলতে পারো? দাদুর চোখের কোনায় জল, আধো-আধো কন্ঠে দুঃখ চাপা হাসি দিয়ে বলল, শহর থেকে ভালো স্কুলে পড়লে ভালো মানুষ হওয়া যায়। গ্রামের পরিবেশ ভালো না দাদু ভাই।
আচ্ছা দাদু, তুমি কি শহরে লেখাপড়া করেছ না গ্রামে করেছ? গ্রামে করেছি আমরা আবার শহরে যাবো কিভাবে? তুমি কি তাহলে মানুষ হওনি দাদু? এইসব কথা ছেড়ে ভাপা পিঠা খাও তো দাদুভাই ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। রাতুল ক্লাস নাইনে পড়ে। সে প্রকৃতিকে খুব ভালোবাসে। ভালোবাসে আশেপাশের প্রিয় মানুষদের সাথে মিলেমিশে থাকতে পছন্দ করে। একদিন বিকেলে দাদুর সঙ্গে রাতুল বের হলে গ্রামের প্রকৃতি ঘুরে দেখতে। কিছুদূর এগিয়ে বড় একটা খেলার মাঠ ওখানে অনেক ছেলে-মেয়েরা খেলা করছে।
রাতুলের চোখে পড়ল একটি ছেলে গলার সাথে লুঙ্গি পেচিয়ে বেঁধে পুরো গা ঢেকে রেখেছে। রাতুল বলল, দাদু! দাদু! দেখো না একটা ছেলে এমন করে লুঙ্গি পেঁচিয়ে রেখেছে কেন? দাদুভাই খুব শীত পরেছে তাই ওর মা তাকে এমন করে বেঁধে দিয়েছে শীতে যেন কষ্ট না পায়।
ওরা খুব গরীব ওদের শীতের কাপড় কেনা সামর্থ্য নেই। তাই এভাবে লুঙ্গি বেঁধে রেখেছে। রাতুলের মুখখানায় কালো মেঘের ছায়া নামল। রাতুল বলল, জানো দাদু বাবা- আমাকে অনেক টাকা দিয়েছে শীতের ছুটিতে ঘুরার জন্য। দাদু আমি এই টাকাগুলো নষ্ট করব না ঘুরে, আমি গ্রামের গরীবদের জন্য শীতের কাপড় কিনে দেবো। তুমি আমাকে বাজারে নিয়ে চলো। দুজনে মিলে অনেকগুলো শীতের কাপড় কিনে আনল। তারপর ঐ বড় খেলার মাঠে গিয়ে সামর্থ্যহীন পরিবারের গরিব বাচ্চাদের উপহার হিসাবে দিল। শীতের কাপড় পেয়ে বাচ্চাগুলো অনেক খুশি। সবার ঠোঁটে সরলতার হাসি। ওদের সরল হাসি দেখে রাতুলের মনের কালো মেঘগুলো আনন্দের বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দিলো নয়নের পাপড়ি।
দাদুভাই মানুষের কষ্টকে যে অনুধাবন করতে পারে, মানুষের দুঃখে যার চোখে জল আসে, মানুষের বিপদে যে ঝাপিয়ে পরে সেই তো প্রকৃত মানুষ। আর তোমার মধ্যে আমি তা দেখতে পাচ্ছি। অনেক দোয়া করি তোমার জন্য। জীবন যুদ্ধে জয়ী হও। রাতুল বলল, দাদু প্রত্যক শীতের ছুটিতে তোমার মত পরশ পাথরের ছোঁয়া পাই বলে মরচে পরা হৃদয়কে চকচকে করতে পারি কথাটা বলেইদাদুকে জড়িয়ে ধরল রাতুল।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। হিমেল/বিডি দিগন্ত